ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বঃ অবিভক্ত ভারতবর্ষের উজ্জ্বল দুই নক্ষত্র মরহুম নওয়াব সৈয়দ সামসুল হুদা ও প্রথম বাঙালী মুসলমান ব্যারিস্টার স্যার আবদুল রসুল এবং আলহাজ্বমাওলানা ফখরে বাঙ্গাল তাজুল ইসলামসহ বহু পীর-দরবেশ,সাধক আর জ্ঞানী,গুণীর পবিত্র জম্মভুমি ঐতিহাসিক নাসিরনগর।
নবাব সৈয়দ শামসুল হুদাঃ ন্যায়পরায়ন ও প্রখর ব্যাক্তিতব গোকর্ণ গ্রামে ১৮৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা সৈয়দ রিয়াজতউলাহ আরবী ও ফারসি ভাষার পন্ডিত ছিলেন। তিনি আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। কোলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ হতে এম.এ এবং বি.এল পাস করেন।আইনশাস্ত্রে তাঁর ব্যাপক পড়াশুনা থাকায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ১৯০২ সালে ‘টেগোর প্রফেসর অব ল’পদ প্রদান করেন। টেগোর প্রফেসর হিসাবে তিনি Principles of Crimes in British India’ ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯০৮ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯০৯ সালে ইমপেরিয়েল লেজিসলেটিভ কাউনসিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১২ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১২-১৯১৭ সালে বাংলার গভর্ণর পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯১৭-১৯২১ সালে কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯১৩ সালে এবং ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে যথাক্রমে ‘‘নওয়াব’’এবং কে.সি.আই.ই. উপাধিতে ভূষিত করেন। বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং ১৯২১ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯২২ সালে এ মহান ব্যাক্তিতব ইমেত্মকাল করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রসুলঃ পিতা গোলাম রসুল সাবেক ত্রিপুরা জেলার (বর্তমান ব্রাহ্মণ বাড়িয়া জেলা) একজন জমিদার ছিলেন।ব্রিটিশ ভারতেএকজন বিশিষ্ট বাঙালী জাতীয়বাদী নেতা। ১৮৭২ সালেনাসিরনগর উপজেলার গুনিয়াউক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮৮-তে ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিছুকাল ঢাকা কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৮৮৯ সালে বিলেত গমন করেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ১৮৯২-তে প্রবেশিকা, অক্সফোর্ডের জোনস কলেজ থেকে ১৮৯৬-তে বি.এ. এবং ১৮৯৮-তে এম.এ. পাস করেন। ওই বছর ১৮৯৮-এ মিডল টেম্পল থেকে আইন পাস করে বি.সি এল. উপাধি লাভ করেন বাঙ্গালী হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম এই ডিগ্রী লাভের কৃতিত্ব তাঁরই। ব্যারিস্টারি পাস করে ১৮৯৮ সালে এ দেশে ফিরে কলকতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শরু করেন। The Mussalman’(১৯০৬) নামে সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন কিন্তু রাজনৈতিক কারণে নিয়োগ বাতিল করা হয়। ১৯১৬ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। তিনি বিশিষ্ট বাগ্মী, তীক্ষ্ণ আইনবেত্তা,দৃঢ়চেতা, নিষ্ঠাবান ও সৎ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। ১৯১৭ সালে মৃত্যু বরণ করেন।
ফখরে বাঙ্গাল হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম (র.)- তিনি ফখরে বাঙ্গাল নামে পরিচিত। তাঁর পিতার নাম মাওলানা আনওয়ারউদ্দিন। বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী আইনবেত্তা ১৮৯৬ সালে (১৩১৫ হিজরী) ভূবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীঘর মাদ্রাসা কিছুদিন মাদ্রাসা পড়াশুনা করেন। শ্রীঘর মাদ্রাসা পড়াশুনা করার পর হবিগঞ্জের বাহুবল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। পরবর্তীতে ১৩৩৮হিজরীতে অধিকতর জ্ঞানার্জনের জন্য ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশুনা শেষ করে ১৩৪৫ হিজরীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িতব পালন করেন । মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ পদে আসীন ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশেপাশের এলাকয়া ভ্রান্ত কাদিয়ানী মতবাদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি নেজামে ইসলাম পাটির সভাপতি ছিলেন। তীক্ষ্ণ ,দৃঢ়চেতা ও অসাধারণ বাগ্মী ১৯৬৭ সালে ৩ এপ্রিল ১৩৭৩বঙ্গাব্দ,২০চৈত্র ) মৃত্যু বরণ করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস